নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট রাঘব বোয়ালদের লুটে খাওয়ার আরেকটি ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ক্ষতি ছাড়া কোন কল্যাণ বয়ে আনবে না।
শনিবার (৮ জুন) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি আয়োজিত “বাঙালির জাগরণে করণীয় ও সিরাজুল আলম খান” শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
চলতি বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগকে ‘মাছের টোপ’ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মাছ ধরার জন্য যেমন টোপ ব্যবহার করা হয়, দুর্নীতিবাজদের ধরার জন্য টোপ দিচ্ছেন- হাস্যকর। ব্যাপার হচ্ছে আমরা তো দেখলাম মাছের টোপ দিয়ে আপনারা কাদেরকে ধরেন। আপনারা নিজেরাই তো এটার সঙ্গে জড়িত। আপনি বাজেট দেখলেই বুঝতে পারবেন, রাঘব বোয়ালদের লুটে খাওয়ার আরেকটি ব্যবস্থা করেছে। এটা প্রত্যেক বছর একই ঘটনা ঘটছে এবং অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধুমাত্র ক্ষতি ছাড়া আর কিছু করবে না। যেখানে এখন বড় সংকট সাধারণ মানুষের জন্যে, ইম্প্রেশন, দ্রব্যমূল্যের দাম এত বেড়ে গেছে যেটা সাধারণ মানুষের কাছে সহনীয় হচ্ছেনা। আজকের এই সমস্ত কথা বলে ধূম্রজাল সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষকে আর কতদিন প্রতারণা করবেন?
তিনি বলেন, সিরাজুল আলম খান বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের চালিকা শক্তির অন্যতম ব্যক্তি ছিলেন। আমাদের মুক্তি সংগ্রামে তিনি তার অবস্থান থেকে কাজ করেছেন। তিনি ভিন্ন রাজনীতি করে গেলেও বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে তাঁর অবদানকে কখনো অস্বীকার করা যাবে না। যারা তার অবদানকে অস্বীকার করতে চায়, তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করতে চায়।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ইতিহাস তো বিকৃত করাই হচ্ছে। এখানে একজন দল, যারা একজন ব্যক্তি, দল ছাড়া আর কোন কিছুরই অবদান আছে বলে স্বীকারই করতে চায়না। এজন্যই তারা বহু আগ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যারা কাজ করেছে, মুক্তি সংগ্রাম করেছে, তাদের সবাইকে অবলীলায় অস্বীকার করে। শুধু অস্বীকারই করে না, তাদেরকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করা হয়।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ থেকে কোন শোকবাণী দেয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, কত বড় অকৃতজ্ঞ হলে একটি দল তাদের মূল চালিকা শক্তির মধ্যে এ মানুষটি ছিলেন, তাকে তারা স্মরণ পর্যন্ত করেনি। এটা শুধু তার বেলায় না, সকলের বেলায়ই প্রযোজ্য। আজকে তারা একই কারণে জিয়াউর রহমানকে সহ্য করতে পারে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, যারা স্বাধীনতার অবদান রাখা ব্যক্তিদের অস্বীকার করে, তারা অকৃতজ্ঞ ছাড়া আর কিছুই না।
ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে এই মঞ্চে যারা আছে, আমরা সবাই মুক্তি চাই। বাংলাদেশ আজকের একটি ভয়ঙ্কর সংকটের মধ্যে পতিত হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশের অস্তিত্ব প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। এমন একটা শাসকগোষ্ঠী জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে, যারা বাংলাদেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন থেকে বাংলাদেশকে তারা বহু দূরে ছিটকে দিচ্ছে। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে সিরাজুল আলম খানকে নতুন করে মনে করা দরকার। মনে করা দরকার, তাঁর যে অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা, তাত্ত্বিক দার্শনিক যে যোগ্যতা, সে যোগ্যতা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে তিনি ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করে স্বাধীন হতে সাহায্য করেছেন।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, আজকে আমরা এমন একটি শাসকগোষ্ঠীর যাঁতাকলে পড়েছি, যারা এখানকার মানুষের কল্যাণের জন্য কোন কিছু করা তো দূরে থাক, মানুষকে তারা শোষণ, নিগৃহীত ও নিপীড়ন করছে এবং প্রতিমুহূর্তে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে তারা ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমরা সবাই যুগপৎ আন্দোলন করছি, কেন করছি, গণতান্ত্রিক অবস্থায় ফিরে যাওয়াই আমাদের একমাত্র উপায়। আমাদের অধিকার ফিরিয়ে আনা ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা, বেঁচে থাকার অধিকার কে নিশ্চিত করা, আমাদের কথা বলার অধিকার কে নিশ্চিত করা, এই বিষয়গুলো অনেক বেশি আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে এবং সেটাই আমাদের অর্জন করতে হবে।ছোটখাটো ভুল বোঝাবুঝি বাদ দিয়ে দল মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি’র সভাপতি আ স ম আবদুর রবের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তৃতা করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংগতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি প্রমুখ।
###
পরি/কর