সাইফুল ইসলাম: ফরিদপুরের সালথা উপজেলা যদুনন্দি ইউনিয়নে এলাকার দলপক্ষকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে সিরাজুল ইসলাম নামে এক যুবক নিহতের ঘটনায় যদুনন্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রফিক মোল্যাকে প্রধান আসামি করে ৫৬ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার তিন দিন পর রবিবার নিহত সিরাজুলের ভাই মিরাজুল মোল্যা বাদী হয়ে সালথা থানায় এ মামলা করেন। মামলাটি নথিভুক্ত করে এর তদন্তভার দেয়া হয়েছে সালথা থানার এসআই সৈয়দ আওলাদ হোসেনকে। তবে হত্যার ঘটনায় এখনও কাউকে আটক করেতে পারেনি সালথা থানা পুলিশ। খুনের ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর-লুটপাট হচ্ছে। আগুন দেয়া হচ্ছে হয়েছে একটি বাড়িতে।
জানা গেছে, এলাকার দলপক্ষকে কেন্দ্র করে গত এক মাসে খারদিয়া গ্রামের প্রভাবশালী বাসিন্দা যদুনন্দী ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক মোল্যার সমর্থকদের সাথে ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মিয়ার সমর্থকদের একাধিক বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ রফিক ও আলমগীরকে গ্রেফতার করে পুলিশের উপর হামলা মামলায় আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠান। গত ২৮ এপ্রিল তারা উভয়ই আদালত থেকে জামিনে পেয়ে এলাকায় ফিরে আসেন। তারা জামিনে এসে আবার এলাকায় দলপক্ষ নিয়ে উভয় গ্রুপের মধ্যে বেশ কয়েকদিন ধরে চরম উত্তেজনা চলছিল। চলমান উত্তেজনা মধ্যে গত ৫ মে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে দুই গ্রুপের শতশত লোকজন দেশীয় অস্ত্র হাতে নিয়ে সংঘর্ষে ঝাপিয়ে পড়ে। সংঘর্ষে অন্তত ৩৫ জন আহত হন। আহতদের ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বোয়ালমালী ও মুকসেদপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র ভর্তি করা হয়েছিল।
সংঘর্ষে অাহত আলমগীরের সমর্থক সিরাজুল ইসলাম মারা যান। সিরাজুলের মারা যাওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে রফিকের সমর্থকরা পিছু হটলে তাদের অন্তত ৫০টি বসত বাড়িঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয় আলমীগের সমর্থকরা। লুটপাট করা হয় ঘরে থাকা টাকা পয়সা ও আসবাবপত্র। এতে হারুন শিকদার, সোহরাপ সিকদার, বকুল মোল্যা, ইরন মেম্বার, লুৎফর মিয়া, শাহিন শিকদার, আব্দুল রব কাজী, নজরুল কাজী, জুয়েল কাজী, খোকন কাজী, রোকন কাজী, শহিদ খন্দকার, ওয়াহিদ কাজী ও মিরান মোল্যার বাড়িসহ অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
এদিকে সিরাজুল খুনের ঘটনার পর থেকে খারদিয়া, উজিরপুর ও সাধুহাটি গ্রামে মামলার আসামি ও তাদের সমর্থকদের বাড়িতে গিয়ে প্রতিদিনই হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে যদুনন্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মিয়া ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে। উজিপুর গ্রামে মানোয়ার ফকির নামে এক ব্যক্তি বাড়িতে আগুনও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
নিহত সিরাজুলের মা রুবি বেগম বলেন, কয়েক মাস আগে বিয়ে করে নতুন জীবন শুরু করেন সিরাজুল। যারা আমার সন্তানকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করলো, আমি তাদের বিচার চাই। যারা আমার সন্তানকে হত্যা করেছে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।
মামলা তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সৈয়দ আওলাদ হোসেন বলেন, এক দিকে নিহতের পরিবার ঘটনার তিন পর মামলাটি করেছেন। অপরদিকে আসামিরাও পলাতক রয়েছে। যে কারণে এখনও কাউকে অাটক করা সম্ভব হয়নি। তবে চেষ্টা চলছে খুব তাড়াতাড়িই আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে। অগ্নিসংযোগ, বাড়ি ঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের বিষয় তিনি বলেন, কিছু বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটছে। একটি বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে বলেও শুনেছি। এসব ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। মূলত পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে।
ফরিদপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা-সালথা সার্কেল) মো. সুমিনুর রহমান বলেন, খারদিয়ার সংঘর্ষে দুটি মামলা হয়েছে। একটি পুলিশের কাজে বাধা প্রদান ও অন্যটি হত্যা মামলা । দুটি মামলার আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ওই এলাকার পরিবেশ শান্ত রাখতে অস্থায়ী ভাবে পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।