নির্বাচন বিলম্ব হলে ষড়যন্ত্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে : ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন
নির্বাচন বিলম্ব হলে ষড়যন্ত্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে : ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন

- আপডেট সময় : ০৪:৪২:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫ ১০১ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন ডিসেম্বরের পর নির্বাচন বিলম্ব হলে ষড়যন্ত্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।
রোববার (১ জুন ) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি) সভার আয়োজন করে।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার যারা চালাচ্ছেন তারা আমাদের কাছে প্রাইভেটলি বলেন যে, ডিসেম্বরে নির্বাচন হলেও তো বিএনপি দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করবে। আর জুন মাস হলেও তো তাই করবে। আপনারা চাপাচাপি করেন কেন? কিছুদিন আগে প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে আমরা গিয়েছিলাম। আমরা কেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাই- এ ব্যাপারে আমরা ব্যাখ্যা দিয়েছি। এই ব্যাখ্যা দিয়েছিলাম যে, ডিসেম্বর হচ্ছে শীতকাল এটা হচ্ছে নির্বাচনের একটা পরিবেশের সময়। আপনারা যে বলছেন জুন মাসের মধ্যে নির্বাচন দিবেন। নির্বাচন যত বিলম্ব হবে, আমরা মনে করি এদেশে যারা পতিত স্বৈরাচারী সরকার দেশে-বিদেশে পালিয়ে আছে- তারা নানাভাবে ষড়যন্ত্র করবে। কিছু কিছু ষড়যন্ত্রের নমুনা আমরা দেখছি। যত বিলম্ব হবে ষড়যন্ত্র হতে পারে সেটা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আপনি যত শীঘ্র নির্বাচন দেওয়া প্রয়োজন। আপনারা যে বলছেন জুনে (নির্বাচন) দিবেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে হবে রোজা, এটাকে তো কেউ পিছিয়ে দিতে পারবে না। রোজা এবং ঈদ মিলে ২ মাস চলে যায়। তারপরে এপ্রিল মে হচ্ছে দেশে পাবলিক পরীক্ষা এসএসসি এবং এইচএসসি। এর ভিতরে ভোট করার সুযোগ নেই। আর এসএসসি এবং এইচএসসি যে স্কুল কলেজ সেন্টার হয়, সেগুলো কিন্তু ভোটের সেন্টার হয়। তাহলে আপনারা তো এপ্রিল মে ইলেকশন করতে পারবেন না। আর জুন মাসে পুরাপুরি বর্ষাকাল চলে আসে। এবার তো দেখলাম এই মাসে কি পরিমাণ বর্ষা হয়। সারা দেশে বন্যা অবস্থা। এই সময় তো নির্বাচনের সময় নয়। তাই আমরা মনে করি, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব। এবং আমরা দাবী করেছি আপনি ডিসেম্বরের মধ্যে যেদিন সুইটেবল মনে করেন, আপনারা একটি তারিখ ঘোষণা করেন। আর যখনই নির্বাচনের ঘোষণা হবে তখন রাজনৈতিক দলগুলো এবং জনগণ নির্বাচন মুখী হয়ে যাবে। তখন ছোটখাটো ষড়যন্ত্র ওই জনগণই মোকাবেলা করবে। এবং এই সরকার যেহেতু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, আপনারাও বলেন আপনারা অনির্দিষ্টকালের জন্য থাকবেন না, আপনারা একটা সময় পর্যন্ত বিদায় নিতে হবে। আমরা মনে করি, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিলে আপনারা সম্মানের সাথে একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে বিদায় নিতে পারেন। এর থেকে সম্মানের আর কিছু হতে পারে না। আর এই কারণে জুন মাসে নির্বাচন করতে পারবেন না। এর থেকে যদি বিলম্ব হয়- আপনারা এমন সব ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করতে হবে যে, কখন নির্বাচন হয় আমরা অনিশ্চিত। বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। এ কারণে আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে (নির্বাচন) চাই। এখানে (সরকার ) তেমন কোন সদুত্তর দিতে পারে নাই। যখন আমি জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত যে অসুবিধা আছে সেগুলো বলার পরে। তাই আমরা পরিষ্কার বলছি, ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের জনগণ নির্বাচন চায়। আপনারা ক্ষমতা গ্রহণ করে বলেছেন, জনগণের অধিকার ফেরত দেওয়াই আপনাদের প্রধান কাজ। আর ভোটের অধিকার হচ্ছে সর্বাধিক। ১৬ বছর ধরে জনগণ ভোটের অধিকার পায়না। ভোটের অধিকার দিয়ে জনগণের সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে গেলে দেশও শান্তিতে অগ্রসর হবে ভবিষ্যতের দিকে এবং জনগণও খুশি হবে। আপনারাও সম্মানের সাথে বিদায় নিতে পারবেন।
তিনি বলেন, এখন কিছু ব্যাপারে প্রশ্ন উঠেছে। কেউ কেউ আগে সংস্কার চায়। আমরা বলেছি, আমরা তো সংস্কারের পক্ষে এবং এই সরকার ক্ষমতায় আসার আগেই আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি জনগণের সামনে উপস্থাপন করেছে। আমরা বলেছি, জনগণ যদি আমাদেরকে ক্ষমতায় বসায়, আমরা ৩১ দফা সংস্কার করবো। সরকার এসে সংস্কার প্রস্তাব দেওয়ার পরে আমাদের পক্ষ থেকে আমাদের প্রতিনিধি গিয়েও সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা খোলাখুলি বলেছি সকল রাজনৈতিক দল একমত হবে- এমন কোন কথা নেই। তাহলে তো আর আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলই করতাম না। অতএব মিনিমাম ঐকমত্য তৈরি করে আপনারা নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হন। এখন আবার সরকার বলেছে এই মাসের ২ তারিখ থেকে আলোচনা শুরু হবে । আমরা হয়তো আবার যাবো। গেলেও আমরা কি বলবো। আমরা সরকারের আগেই সংস্কার কর্মসূচি দিয়ে রেখেছি। অনেক সংস্কার কর্মসূচি তাদের প্রস্তাবের সাথে মিলে । যেগুলোর উপরে মিনিমাম সকল দল একমত হবে, এগুলোর উপরে ঐক্যমত্য ঘোষণা করে নির্বাচনের দিকে যাওয়া উচিত।
জাপানে সফরে প্রধান উপদেষ্টার মন্তব্যে বিএনপি হতাশ হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের যে সংকট আলোচনা, এটা কিন্তু নির্বাচনকে নিয়ে। এখানে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা অত্যন্ত সম্মানী ব্যক্তি। যিনি এনজিও করে বাংলাদেশে ও বিদেশে সুনাম করেছেন এবং তিনি একটি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তাই আমরা অনেক বিশ্বাস নিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব যারা দিয়েছেন, আমরা যারা নেতৃত্ব দিয়েছি, আমরা অনেক বিশ্বাস করে তাকে এই পদে (প্রধান উপদেষ্টা) বসিয়েছি। কিন্তু তিনি জাপানে গিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন এতে আমরা হতাশ। কেননা উনি বলেছেন একমাত্র বিএনপি নাকি বাংলাদেশে নির্বাচন চায় । কে নির্বাচন চায়না? নির্বাচন তো সবাই চায়। আমরা বলেছি ডিসেম্বরের মধ্যে ইলেকশন হলে নির্বাচন কমিশনের সুবিধা, সরকারের সুবিধা, জনগণের সুবিধা। যুক্তি দেখিয়েছি। যদি কোন অন্য কোন যুক্তি থাকে তাহলে সরকার সেটা পরিষ্কার করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুক। সেটা ছিল তাদের দায়িত্ব। তা না করে বিদেশে বলছে, শুধুমাত্র বিএনপি নির্বাচন চায়, এটা সঠিক না। ৫২ টি দল একত্রিত হয়ে ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়। সেই দলগুলোর এবং নেতাদের নাম পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এখন যদি প্রশ্ন উঠে যে, আপনার উপরে যেখানে আমাদের এত বড় বিশ্বাস, আপনি কেন দেশের জনগণকে কেন বা বিদেশের নাগরিকদের কেন ভুল পথে পরিচালিত করবেন। কেনই বা আমাদের মধ্যে একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবেন। আমরা এখনো আশা করি যে, তিনি এই কথা উপলব্ধি করে তিনি উপদেষ্টদের মধ্যে যারা বেশি কথা বলে, তাদের কর্মকান্ডের মাধ্যমে বিতর্কিত। তাদের মধ্যে যারা বিতর্কিত উপদেষ্টা তাদেরকে বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে ছোট উপদেষ্টা পরিষদ করে, তাহলে সেখানে মতামত কম থাকে। তাদের পক্ষে সেই নির্বাচন অনুষ্ঠানটা সুন্দর হবে। এটা নিয়ে নানা কথাবার্তা হচ্ছে।
আমরা যদি বাংলাদেশে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রদর্শিত পথে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব শক্তিশালী করা, গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা, দেশকে অর্থনীতি- সামাজিক সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন এবং সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে উন্নত অবস্থায় তুলে নেওয়ার জন্য ভবিষ্যৎ সরকারকে সমর্থন করতে পারি, এই লক্ষ্যে আমরা ঐক্যমতের হয়ে কাজ করব।
বিএসপিপির আহবায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডাঃ এ জেড এমন জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী নেতারা বক্তৃতা করেন।