নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০১৩ সালে আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির অন্তত ১০০ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। এসময় আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পত্রিকাটি বাজারে আসবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা ছাপাখানায় লুটপাটসহ অন্যান্য বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান।
মাহমুদুর রহমান বলেন, দুদিন আগে বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে ম্যাজিস্ট্রেট ও দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তারা তালা ভেঙে আমার দেশ পত্রিকার ছাপাখানা আমাদের বুঝিয়ে দেন। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই প্রেসের আর কিছুই অবশিষ্ট নাই। এমনকি ইলেকট্রিক প্যানেল পর্যন্ত খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র দুটি মেশিনের খন্ডাংশ পড়ে আছে, যেগুলো ভাঙা সম্ভব না বলে চুরি করে নিয়ে যেতে পারে নি। এগুলো যে টুকরো-টুকরো করে কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার কিছু প্রমাণ প্রেসের মধ্যে পড়ে ছিল। দেখে মনে হয়েছে, শেখ হাসিনা আমাকে টুকরো করতে না পেরে আমার দেশ পত্রিকার প্রেস টুকরো টুকরো করেছে। এটাই ফ্যাসিবাদের চরিত্র। আমাদের জন্য ইতিবাচক যে সরকারি প্রতিনিধি অর্থাৎ একজন ম্যাজিস্ট্রেট এবং দুজন ওসি প্রেসের অবস্থা দেখেছেন। একজন ওসি গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন, এই প্রেসের আর কোন কিছু অবশিষ্ট নাই।
মাহমুদুর রহমান বলেন, ডিসেম্বর মাসের মধ্যে আবার আমার দেশ পাঠকের হাতে তুলে দিব। হাতে আর আড়াই মাস আছে। পত্রিকাটি আবার জনগণের পক্ষে ও ভারতীয় সম্প্রসারণ বাদের বিরুদ্ধে কথা বলবে। লুটেরাদের বিরুদ্ধে কথা বলবে।
তিনি বলেন, নতুন করে প্রেস বসানো সময়ের ব্যাপার, অনেক সময় লাগবে। অথচ দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। যেটার প্রতিরোধ করতে আমার দেশের মত মিডিয়া দরকার। আমার দেশ কর্পোরেট স্বার্থের বাইরে, কোন দলের স্বার্থের বাইরে দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য দাঁড়াবে। দেশের মানুষের জন্য দাঁড়াবে। এজন্য আমার দেশ দ্রুত চালু করতে হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি অন্য দুটি প্রেস থেকে আমার দেশ ছাপা হবে। কিন্তু ছাপানোর আগে ম্যাটার তৈরি করতে হবে। তার জন্য অফিস দরকার। প্রায় ১০০টি কম্পিউটার দরকার। প্রযুক্তি অনেক এগিয়ে গিয়েছে সেগুলো দরকার। সাংবাদিক দরকার। যারা কাজ করতে আসবেন তাদের সেবার মানসিকতা নিয়ে আসতে হবে। এক বছর তারা আমাদের সঙ্গে লড়াই করবে। মেধা অনুযায়ী তাদের যে বেতন ভাতা দেয়া উচিত, সে সামর্থ্য আমাদের নেই। আমার ধারণা আমার সহকর্মীরা আমার সঙ্গে আরও এক বছর লড়াই করতে রাজি হবেন। কিন্তু অফিস খুজে পাওয়ার জন্য এখম আমাদের সংগ্রাম করতে হচ্ছে। অফিস সেটাপ করাই এখন চ্যালেঞ্জ।
তিনি আরও বলেন, যেদিন আমরা আমার দেশ পত্রিকার কম্পিউটার ও অনান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র অন্যত্র স্থানান্তর করতে চেয়েছিলাম, সেদিন আমাদের অফিস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। সেদিন আমি জেলখানায় আটক ছিল। জেলখানায় আমাকে একজন খবর দিয়েছিল, আল্লাহর রহমতে তিনি এখনো জেলখানায় জীবিত আছেন। তিনি তখন জামায়াতে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, আযহার ভাই। আমি শুধু তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমার কোন সহকর্মী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কি না? আল্লাহর রহমতে আমার কোন সহকর্মীর কিছুই হয়নি। সবাই নিরাপদে ছিলেন। ওই মুহুর্তে এটাই আমার জন্য স্বস্তির সংবাদ ছিল।
ফ্যাসিবাদের চরিত্র বুঝবেন, তখন তদানীন্তন হাসিনা সরকারের মন্ত্রী আমার দেশ পত্রিকার অফিস পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সম্ভবত তিনি ছিলেন আমির হোসেন আমু, আমি শতভাগ নিশ্চিত নই। সেখানে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, এই আগুন আমার দেশ পত্রিকা কর্তৃপক্ষই লাগিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন আমরা নাকি ইন্সুরেন্সের টাকার জন্য নিজেদের প্রেসে আগুন লাগিয়েছি। কিন্তু তিনি জানতেন না আমাদের ওই অফিসের কোন ইন্সুইরেন্সই ছিল না। দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার ছিল, আমার দেশের উপর এত জুলুম চললেও কোন গণমাধ্যম এর সমালোচনা করেনি। যারা বাক স্বাধীনতার কথা বলেন তাদের মুখে এখন পর্যন্ত কোন প্রতিবাদ শুনলাম না। তারা বিগত ১৬ বছর শুধু শেখ হাসিনার তাবেদারি করেছেন। বড় বড় সম্পাদকরা কেউ বলেননি, আমার দেশের উপর এই জুলুম মেনে নেয়া যায় না।
তিনি বলেন, মিডিয়ার চরিত্র বোঝার জন্য তিনটি উদাহরণ দেই। তার আগে বলে রাখি মিডিয়া বলতে বাংলাদেশে মালিক এবং সম্পাদকই সবকিছু। ১. আমারদেশ ওই সময় বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পত্রিকা হওয়া সত্ত্বেও আমাকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্যপদ দেয়া হয়নি। বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাসান হাফিজকে ধন্যবাদ জানাই তিনি বিলম্বে হলেও আমার সদস্যপদ দিয়েছেন। ২. আপনারা জানেন পত্রিকার মালিকদের সংগঠন নোয়াব, শুনলে অবাক হবেন আমার দেশকে নোয়াবের সদস্যপদ দেয়া হয়নি। আরেকটি আছে সম্পাদক পরিষদ, সেখানেও আমাদের দেশকে সদস্যপদ দেয়া হয় নাই। কারণ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এবং দেশের সার্বভৌমত্বের পক্ষে আমার দেশ বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর ছিল। কাজেই কোন পত্রিকার মালিক ও সম্পাদক আমার দেশ পত্রিকার পক্ষে ছিলেন না। তারা বরং আনন্দিত হয়েছেন।
সুতরাং আজ যে গণমাধ্যম সংস্কারের কথা হচ্ছে তার আগে মিডিয়ার মালিক ও সম্পাদকদের সংস্কার করতে হবে। অন্তর্বতীকালীন সরকার অনেকগুলো সংস্কার কমিশন করেছে। অনেকগুলো কমিশন হয়েছে জানি না তারা সবগুলো কাজ কিভাবে শেষ করবে।
সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ ভাই, একজন প্রবীন সাংবাদিক। তিনি একজন অসাধারণ লেখক। তাকে ছাত্রলীগ যেভাবে নাজেহাল করে ধরে নিয়ে গেছে, কোন সম্পাদক এ ঘটনার প্রতিবাদ করেননি। নোয়াব কোথায় ছিল? নাকি আবুল আসাদ ভাই ইসলামের কথা বলেন বলেন দেখে তিনি ন্যায়ের অধিকার রাখেন না। আরেকজন সম্পাদক মঈনুল হোসেন, তাকে কোর্ট চত্ত্বরে নাজেহাল করেছে। তার প্রতিবাদ কোন সম্পাদক করেন নি। তাই এই সম্পাদক ও মালিকদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে।
কারণ এই মিডিয়া ১৬ বছর ধরে হাসিনার দোসর হয়ে উঠেছিল। শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী হয়ে ওঠার জন্য পুলিশ, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি মিডিয়ারও ভূমিকা ছিল। সংবাদ সম্পাদনার নামে নির্লজ্জ তেলবাজির প্রতিযোগিতা আমরা দেখেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার দেশ পত্রিকার ছাপাখানা অফিস সরঞ্জাম সহ অন্তত ১০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২০১১ সালে আমি একটি মামলা করেছিলাম ফ্যাসিবাদীদের কারণে সেই মামলাটি অগ্রসর হয়নি সে মামলাটি আমি উচ্চ আদালতে আপিল করব। পাশাপাশি পত্রিকার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করার কথা জানান তিনি।
###