প্রতিবেদক: দেশের অর্থনীতির আকার দিন দিন বড় হচ্ছে। এডিপি বাস্তবায়নের আরো বাড়ছে। গত অর্থ বছরে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। তবে কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের সমস্যা দেখা দেয়। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৮ লক্ষ কোটি টাকার বাজেটের আকার হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মোঃ শহীদুজ্জামান সরকার।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) আয়োজিত আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রাক বাজেট আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাজেট হলো জনগণের কল্যাণের জন্য একটি সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অর্থনৈতিক রোড ম্যাপ। সরকার অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ আলোকে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার দেশের জনগণের প্রতি অত্যন্ত আন্তরিক। প্রতিটি ক্ষেত্রে সমানভাবে উন্নয়নের গুরুত্ব দেয় সরকার।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে একটি চ্যালেঞ্জিং অর্থনীতি। আমরা এখনো আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্য পৌঁছাতে পারিনি। এজন্য সরকার অষ্টম পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনা ও নবম বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা করার কাজে হাত দিয়েছি। আমাদের হয়তো সীমাবদ্ধতা আছে, কিন্তু এলডিসি থেকে উত্তরণে আমাদের অর্জন গুলো বিবেচনা করতে হবে। আমাদের জীবন যাত্রার মান বেড়েছে আমাদের চাহিদার তফাৎ হচ্ছে। এক সময় মানুষের দাবি ছিল ভাত দাও, কাপড় দাও। এখন আর ভাত কাপড়ের দাবি মানুষ করেনা। দ্রব্যমূল্যের দাম বেশি হলেও সেই দাবিটি অন্যত্র চলে গেছে। এখন সুন্দর ও উন্নত জীবন যাপনের জন্য মানুষ দাবি করে। এটি এই সরকারের অর্জন। প্রধানমন্ত্রী আন্তরিকভাবে এই কাজগুলো করছেন। আপনারা যে বাংলাদেশ রুপে দেখতে চান সেই বাংলাদেশে অবশ্যই হবে।
সরকার চালানোর ক্ষেত্রে অনেক সময় অনুমান নির্ভর সিদ্ধান্ত নিতে হয়। বাস্তবে দুইয়ে দুইয়ে চার অনেক সময় হয়না।
তিনি আরো বলেন, আজকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য যে অর্থডক্স চিন্তা, নীতি সুদ হার বৃদ্ধি করার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। পৃথিবীর বড় অর্থনীতির দেশগুলো এ পথ অবলম্বন করছে। আমরা কিন্তু প্রকৃত অর্থে মুক্ত অর্থনীতির অনুসারী নয়। আমরা একটি কল্যাণকর অর্থনীতির অনুসারী। আমরা জনকল্যাণের জন্য অর্থনীতি করতে চাই। সেক্ষেত্রে আমাদের মিক্স অর্থনীতির দিকে যেতে হয়। শুধুমাত্র আমরা মুক্ত অর্থনীতির ধ্বজা ধরে চলছিনা এবং বলছিনা। জনকল্যাণকর অর্থনীতির জন্য আমাদের করণীয় আমরা করছি।
সেমিনারে অংশ নেওয়া অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ীরা ও গবেষকরা বলেন, দেশ অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার পথে নানা প্রতিকূলতা ও সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে গুণগতমানের সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা, স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় রাজস্ব আহরণ বাড়ানো ও ব্যাংক খাতের দুরবস্থা দূর করে বাজেট তৈরি করতে হবে। বাজেটে কৃষি ভিত্তিক শিল্পায়নের দিকে নজর দিতে হবে। তাছাড়া বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্তত ৬০ শতাংশ রপ্তানি করা ও সিইও পর্যায়ে বাংলাদেশীদের নিয়োগের শর্ত করা উচিত।
র্যাপিড চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদ সদস্য নাসের শাহরিয়ার জাহেদী।
বাজেট ও সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা তুলে ধরে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী বাজেটের আকার হবে ৮ লাখ কোটি টাকার। নবম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা তৈরি করার কাজ শুরু করেছি।
অর্থনীতিবিদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, বাজেট প্রণয়নে সংখ্যার বাইরে বেরিয়ে গুণগতমানের দিকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। যাতে বাজেট ব্যয় বাড়ানো যায়। বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। বাজেট ব্যয় ব্যবস্থাপনা আরও বাড়ানোর জন্য সংস্কারের প্রস্তাব দেন তিনি।
আলোচনার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে র্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ বলেন, দেশে এখনও পরোক্ষ কর অনেক বেশি। অথচ উন্নত বিশ্বে প্রত্যক্ষ কর বেশি। এতদিন এসব জায়গায় সংস্কার আনা যায়নি। এখন নির্বাচনের পরে সংস্কার করার সুযোগ অনেক বেশি।
তিনি বলেন, ১২০টি দেশে উন্মুক্ত বাজেট ইনডেক্স হয়। তবে বাংলাদেশে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীদের অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীদের সঙ্গে অনেক বেশি প্রাক-বাজেট আলোচনা হয়। কিন্তু বাজেটে এর প্রতিফলন দেখা যায় না। এ ক্ষেত্রে বাজেট ফলোআপ থাকলে কাজে আসত। ২০০৯-১০ অর্থবছরের তুলনায় এখন বাজেটের আকার ৮ গুণ বেড়েছে কিন্তু সেই হারে রাজস্ব আয় বাড়েনি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন নিয়েও উদ্বিগ্ন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, বাজেটে অনেক বেশি সংস্কার প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সংসদীয় কমিটির সংশ্লিষ্টতা বাড়াতে হবে। যাতে বাজেট বাস্তবায়নের সময় ধরতে পারে। তিনি বলেন, এনবিআরের কর আদায় প্রক্রিয়া অনলাইন করার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সব প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে এনফোর্সমেন্ট বাড়াতে হবে।
ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় আগামী বাজেটে বেশ সংস্কারের মাধ্যমে পদক্ষেপ নিতে হবে। যাতে আমরা ব্যবসা করতে পারি। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে না পারলে কর দেওয়ার ক্ষমতা কমে যাবে।সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি কর বাড়ানোর জন্য যথার্থ হবে না বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
#SS/DH