প্রতিবেদক: জেনোসাইডের ব্যাপক সংজ্ঞা রয়েছে। শুধু গণহত্যা দিয়ে এর সংজ্ঞা বুঝায় না। এটি রোমান- গ্রিক শব্দ হওয়ায় এর পূর্ণাঙ্গ অর্থপূর্ণ শব্দ বাংলায় নেই। তাই জেনোসাইড শব্দটিকে প্রচারণায় নিয়ে আসতে হবে। তাছাড়া একাত্তরের জেনোসাইড’র স্বীকৃতি পেতে রূপকল্প প্রণয়ন করে এগিয়ে যেতে হবে।
শনিবার (২৩ মার্চ) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম – মুক্তিযুদ্ধ ৭১ আয়োজিত বাংলাদেশ ‘জেনোসাইড ১৯৭১’ এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বৃহত্তম গণহত্যা বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্বের নীরবতা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ’৭১ এর কার্যনির্বাহী সভাপতি, নূরুল আলমের সভাপতিত্বে ও রাষ্ট্রদূত কামালউদ্দিনের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক ইউনিভারসিটি সেন্টার ফর পীস এন্ড জাস্টিস বিভাগের গবেষণা পরিচালক ড. সঞ্জীব হোসেন। এছাড়া আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অফ পীস এন্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও সেন্টার ফর জেনোসাইড ষ্টাডিজ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন, শহীদ সন্তান ও প্রজন্ম ৭১’এর সভাপতি আসিফ মুনীর,আমরা একাত্তর সভাপতি মাহবুব জামান, সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী সিকদার, লেখক ও গবেষক হারুন হাবীব, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের লেখক ও ট্রাস্টি মফিদুল হক,সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার অনেক দেশী বিদেশী অনেক চাপের মুখেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পেরেছে। এখন জেনোসাইডের স্বীকৃতি পেতে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে রূপকল্প নিয়ে কাজ করতে হবে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যেই জেনোসাইড সংগঠিত হয়েছিল, সেটি শুধুমাত্র গণহত্যা দিয়ে বুঝানো সম্ভব নয়। এখানে এখানে টার্গেট কিলিং, নির্বিচারে গণহত্যা , ধর্ষণ , লুন্ঠন, ডাকাতি, সম্পদ দখল, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়াসহ জাতিগত নিধনের উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। তাই এটিকে জেনোসাইড বলতে হবে। রোমান ও গ্রিক শব্দ জেনোসাইড’র ব্যাপক সংজ্ঞা রয়েছে। শুধু গণহত্যা দিয়ে এর সংজ্ঞা বুঝায় না। এটি রোমান- গ্রিক শব্দ হওয়ায় এর পূর্ণাঙ্গ অর্থপূর্ণ শব্দ বাংলায় নেই। তাই জেনোসাইড শব্দটিকে প্রচারণায় নিয়ে আসতে হবে। আন্তর্জাতিক আদালতে জেনোসাইড প্রমাণ করার জন্য শক্ত তথ্য প্রমাণ হাজির করতে হবে।
তারা বলেন, এই জেনোসাইড সংগঠিত করার পরও আমরা হয়তো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিচার করতে পারিনি। কিন্তু তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকারদের বিচারের আওতায় আনতে পেরেছি। আওয়ামী লীগ সরকার দেশি-বিদেশি অনেক চাপ নিয়েও তাদের বিচার করেছেন। তখনকার টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির ভিতরেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্টরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই বিচার করেছিলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ২০০৩ সালে গঠিত হয়েছে। বাংলাদেশে ২০১০ সাল থেকে জেনোসাইড নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এর কেউই বাংলাদেশের জেনোসাইড নিয়ে বেশি কাজ করেননি। এখন যেসব তথ্য-প্রমাণ প্রয়োজন সেগুলো সংগ্রহ করা হচ্ছে। একাত্তরের জেনোসাইড’র স্বীকৃতি পেতে রূপকল্প প্রণয়ন করে এগিয়ে যেতে হবে। এতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে স্থানীয়, আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো ও দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে কাজ করতে পারলে একদিন বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে সংঘটিত ভয়াবহ জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া সম্ভব হবে। এতে পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্মের নাগরিকদের কাছে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বর্বরতা নতুন ভাবে উন্মোচিত হবে।