
প্রতিবেদক : বেইলি রোডের দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢালাওভাবে সারাদেশের সকল হোটেল রেস্তোরাঁ গুলোতে অভিযান চালানোকে ব্যাবসায়ীদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ হোটেল ও রেস্তোরাঁ মলিক এসোসিয়েশনের নেতারা। হোটেল রেস্তোরাঁয় অভিযান বন্ধ না হলে অনির্দিষ্ট কালের ধর্মঘটে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন তারা। এসময় নিয়মনীতির আলোকে এই খাতকে শৃঙ্খলায় ফেরাতে রাজউক, সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা, ফায়ার সার্ভিস, তিতাসসহ সেবা সংস্থাগুলোকে দায়বদ্ধতার আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।তারা।
সোমবার (১৮ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের সভাপতি ওসমান গনি, সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান, যুগ্ম সম্পাদক কামরুল হাসান চৌধুরী ও মোঃ ফিরোজ সুমন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তৃতায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান বলেন,
সাম্প্রতি বেইলী রোডে অগ্নিকান্ডের দুর্ঘটনায় ৪৬ জনের প্রাণহানীতে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে শোক প্রকাশ করছে। সংগঠিত অগ্নিকান্ডের ঘটনায় যে সংকটে সৃষ্টি হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক অভিযানের নামে রেস্তোরাঁ সেক্টরে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার প্রতিবাদে বাংলাদেশের মালিক সমিতি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এ অগ্নিকান্ডের ঘটনার সুনির্দিষ্ট কোন কারন এখনো জানা যায়নি। কিন্তু চালাও ভাবে রেস্তোরাঁ সেক্টরটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। সিলিন্ডারের কারনে শ্রমিক কর্মচারিদের গ্রেপ্তার কারা হয়েছে এবং ঢালাও ভাবে রেস্তোরা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনেক কাগজ থাকা সত্যেও রাজউক তার অনাধিকার চর্চা করছে। স্বাধীন দেশে এটা কোন ভাবে কাম্য নয়।
তিনি বলেন, সরকারি বিধি অনুযায়ী কোন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হলে কমপক্ষে ৬ মাস পূর্বে নোটিশ প্রদান করতে হবে। কিন্তু বিনা নোটিশে এভাবে ভাংচুর করে, বন্ধ করে দিচ্ছে রেস্তোরা সমূহ। এই জন্য এ সেক্টরসস বর্তমানে ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন।
রাজউকের এফ ১ ও এফ ২ এর নামে যে নৈরাজ্য চলছে তা কোন ভাবেই কাম্য নয়, কারন আমরা জানি বানিজ্যিক স্পেসে রেস্তোরা ব্যবসা করা যাবে। রাজউকের ২০২২- ২০৩৫ সাল পর্যন্ত ড্যাপের মাস্টার প্লানেও ব্যবসায়ীদেরকে ভবন মিশ্র ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়েছে।
সুতরাং রাজউকের এফ ১ ও এফ ২ এর নামে যে নৈরাজ্য চলছে তা, সঠিক নয়। রাজউক যে উদ্দেশ্যে ভবন নির্মানের অনুমতি দিয়েছিল, সেইভাবে যদি ভবনটি ব্যবহার না হয়, তাহলেও আইন অনুযায়ী কমপক্ষে ১২ মাসের সময় দিয়ে নোটিশ প্রদান করতে হবে- ভবন মালিকে বা ব্যবহারকারী/রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীকে কিন্তু রাজউক বর্তমানে যা করছে তা সম্পূর্ণ বেআইনি।
এখানে উল্লেখ্য যে, রেস্তোরাঁ সেক্টরটি ক্ষতিগ্রন্থ সেক্টর সমূহের মধ্যে অন্যতম সেক্টর। করোনাকালীন সময়ে সরকারি কোন প্রনোদনা/কোন রকমের সহায়তা পায়নি। এর পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য ব্যবসায়ীকভাবে এই সেক্টরটি পিছিয়ে পরে। অনেক চেষ্টা করে ঘুরে দাড়াতে চাচ্ছে এই সেক্টরটি কিন্তু হঠাৎ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আবার ভয়াবহ সংকটে পরে এই সেক্টরটি।
রমজানের মধ্যেও শ্রমিক কর্মচারিদের গ্রেপ্তার ও রেস্তোরাঁ অভিযান বন্ধ হয়নি এবং নীতিবাচক প্রচার-প্রচারনার প্রেক্ষিতে রেস্তোরাঁয় গ্রাহক আসা কমে গিয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এর তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে রেস্তোরাঁ রয়েছে ৪ লক্ষ ৮১ হাজার এর অধিক। এই সেক্টরে কর্মরত রয়েছেন ৩০ লক্ষ শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারি। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে প্রায় ২ কোটি মানুষ এই সেক্টরের উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের রেস্তোরাঁ শিল্পের পরিমান ৩.৭৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার। এই সেক্টরের বিনিয়োগ ২ লক্ষ কোটি টাকা। রাতারাতি এই সেক্টর গড়ে উঠেনি। নানা ধরনের লাইসেন্স/অনুমতি নিয়ে এবং সরকারকে ভ্যাট, ট্যাক্স দিয়ে এই সেক্টর গড়ে উঠেছে।
ইমরান হাসান বলেন,
সরকারি পদ্ধতির জটিলতার কারনে লাইসেন্স নেওয়া সময় সাপেক্ষ ও জটিল বিষয়। বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি সরকারে কাছে আবেদন জানিয়ে ছিল, দেশের সকল রেস্টুরেন্ট সেবাকে একটি সংস্থার অধীনে এনে লাইসেন্স প্রদান করা। লাইসেন্স সহজিকরন বলতে বুঝাচ্ছি- যে, লাইসেন্স করতে হলে এমন কিছু ডকুমেন্ট চাওয়া হয়, যা বাস্তবসম্মত নয় বা প্রদান করাও সম্ভব নয়। লাইসেন্স গ্রহনের প্রক্রিয়া জটিল করে অসাধু-উপায়ে ম্যানেজ করার জন্য বাধ্য করা হয়। ভবন মালিক, রেস্তোরাঁ মালিক, সরকারি সংস্থাগুলো একসাথে কাজ করতে পারলেই এই সেক্টরটি সঠিক ভাবে সুনির্দিষ্ট কম্পালায়েন্স এর মাধ্যমে পরিচারনা করা সম্ভব। এই রেস্তোরা শিল্পটি চরম অবহেলিত সেক্টর। রেস্তোরা শিল্পটি মনিটরিং করে প্রায় ১২টি সংস্থা। এখন সময় এসেছে রোস্তোরা সমূহে হয়রানি বন্ধ করে বন্ধকৃত রেস্তোরাঁ এখনই খুলে দেয়া। কেননা রেস্তোরাঁ শিল্প সমূহে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর এর পূর্বে চলমান মাসের বেতন-ভাতাদি ও বোনাস প্রদান করতে হবে। রেস্তোরাঁ যদি বন্ধ থাকে তাহলে রেস্তোরাঁর মালিক কিভাবে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে বেতন ভাতাদি ও বোনাস প্রদান করবে? আইনি নোটিশ, গ্রেপ্তার ও প্রতিষ্ঠান বন্ধের মাধ্যমে রেস্তোরাঁ সেক্টরে যে অবিচার/জুলুম চলছে তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে সংকট উত্তোয়নের কোন নির্দেশনা না দিয়ে গ্রেপ্তার ও রেস্তোরাঁ বন্ধের মাধ্যমে কোন সুফল বয়ে আসবেনা। ফায়ার সেফটি ও নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে এসওপি প্রদান করা যেতে পারে।
রেস্তোরা সমূহের মধ্যে অভিযানের নামে হয়রানি বন্ধ না হলে আগামী ২০শে মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে যদি এতে কাজ না হয় প্রতিটি একদিনের জন্য বাংলাদেশের সমূহ বন্ধের কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে প্রয়োজন হলে পরবর্তী পর্যায়ক্রমে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকলের বন্ধ করে দেওয়া হবে কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।