নিজস্ব প্রতিবেদক : সম্প্রতি দেশে ডিম আমদানি করার সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ডিম ও মুরগি রপ্তানি করার সময় হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন (বিপিএ)।
মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘ডিম আমদানি নয় রফতানি করুন, প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন ধরে রাখুন’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনটির নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, আজ ডিম ও মুরগি উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পন্ন । আমাদের প্রতিদিন সকল প্রকার ডিমের চাহিদা ৪ কোটি পিস, উৎপাদন আছে ৫ কোটি পিস তাই ডিম আমদানি নয়; ডিম ও মুরগি রপ্তানি করার সময় হয়েছে আমাদের। দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিম ও মুরগি উৎপাদন হচ্ছে। পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম কমানো না গেলে কখনোই ডিম মুরগির দাম কমবে না।
তিনি আরও বলেন, পোলট্রি শিল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ৫০-৬০ লাখ উদ্যোক্তার কর্মসংস্থান জড়িত রয়েছে। তাদের কর্মসংস্থান রক্ষার তাগিদে ডিম আমদানি বন্ধ করতে হবে এবং প্রান্তিক খামারিদের লোকসানের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। দেশের বাজারে ডিমের দাম বেশী কেন তা তদারকি করে পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম কমিয়ে ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ কমিয়ে দাম কমানো সম্ভব।
সংবাদ সম্মেলনে ভারতের সাথে উৎপাদন খরচ তুলনা করে তিনি বলেন, ভারতে ৫০ কেজির ১ বস্তা ব্রয়লার ফিডের মূল্য বাংলা টাকায় ২৭০০ টাকা, ১ বস্তা লেয়ার ফিডের মূল্য ১৮৭৫ টাকা, ১ টি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার মূল্য ২৮ টাকা ও ১ টি লেয়ার বাচ্চার মূল্য ২৫-৩০ টাকা। তাই একটি ডিমের উৎপাদন খরচ বাংলা টাকায় ৫-৬ টাকা তাদের বাজারে একটি ডিম বিক্রয় হয় ৭ টাকা থেকে সাড়ে ৭ টাকায়। এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১১০-১২০ টাকা, বিক্রয় করেন ১৫০-১৬০ টাকায। তাদের উৎপাদন খরচ কম, তারা কম দামে বিক্রয় করেও লাভ করতে পারেন।
পক্ষান্তরে বাংলাদেশের বাজারে ১ বস্তা ব্রয়লার ফিডের দাম ৩৫০০ টাকা। ৫০ কেজি লেয়ার ফিডের মূল্য ২৯০০ টাকা। ১ টি ব্রয়লার বাচ্চার মূল্য ৫০-৬০ টাকা। একটি লেয়ার বাচ্চার মূল্য ৭০-৭৫ টাকা। বাংলাদেশে একটি ডিমের উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকা থেকে ১১ টাকা এবং বাচ্চার দাম ৩৫ টাকা ধরে ১ কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৬৭ টাকা। বাচ্চার দাম বেড়ে গেলে উৎপাদন খরচ আরো বেড়ে যায়। অতএব ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ দ্বিগুন।
সুমন বলেন, পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম কমানো না গেলে কখনোই ডিম মুরগির দাম কমবে না। আমদানি করে ডিম মুরগির দাম কমাতে চাইলে দেশিও শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে, আমদানি নির্ভর হতে হবে। পরবর্তীতে ঠিকই বেশি দামে কিনে খেতে হবে অথবা টাকা থাকলেও ডিম ও মুরগি পাওয়া যাবে না। তাই আমদানি বন্ধ করে দেশিয় উৎপাদনকে কিভাবে ধরে রাখা যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে এবং প্রান্তিক খামারিদেরকে সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদেরকে বাজার প্রতিযোগিতায় রাখতে হবে।
এ সময় কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর দিকে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, কর্পোরেট গ্রুপগুলো ২০১০ সাল থেকে মুরগির বাচ্চায় সিন্ডিকেট করে ১৫ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়েছিল। এরপর প্রাণীসম্পদ মন্ত্রনালয় থেকে একটি কমিটি করে দিয়ে মুরগির বাচ্চার উৎপাদন খরচ ২২ টাকা বের করে লভ্যাংশ সহকারে ৩২ টাকা দাম বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু কর্পোরেট এসোসিয়েশন উচ্চ আদালতে রিট করে সেই কমিটিকে বন্ধ করে দিয়ে তাদের খেয়াল খুশি মত পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে । যার প্রভাব সরাসরি বাজারে এসে পড়ছে।
সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিম আমদানি বন্ধ করে প্রান্তিক খামারিদের ফিড ও বাচ্চা আমদানি করতে দিলে বাজারের বর্তমান কর্পোরেট সিন্ডিকেট ভেঙে যাবে এবং ডিম ও মুরগির দাম কমে যাবে বলে জানান সংগঠনটির সভাপতি সুমন হাওলাদার।
সংগঠনের সভাপতি সুমন হাওলাদারের সভাপতিত্বে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সহ- সভাপতি বাপ্পি কুমার দে, সাধারন সম্পাদক ইলিয়াস খন্দকার, জাতীয় যুব পুরস্কার প্রাপ্ত খামারি মোঃ জাকির হোসেনসহ প্রান্তিক খামারীরা।