মেইল প্রতিবেদন : রাজধানীর ডেমরায় এক নারীর ফাঁদে পড়ে দুই ব্যাক্তি হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। যৌনকর্মী মোছা. সুমি পাখি (৩৫)ও তার প্রেমিক মিলে পাখির সাবেক স্বামী মো. জাহাঙ্গীর আলম ও খদ্দের মো. আলী হোসেনকে খুন করা হয়। হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকায় পাখি ও তার স্বামী মো. আবু বক্কর সিদ্দিককে (৩২) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (১৬জুন২০২৩) পাখি ও তার স্বামীকে দুই দিনের রিমান্ড শেষে ডেমরা থানা থেকে আদালতে পাঠালে আবু বক্কর সিদ্দিক সেখানে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আদালত তাদের জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন। গত বছর ৩০ নভেম্বর সারুলিয়ায় নুর ইসলামের বাড়ি থেকে জাহাঙ্গীরের কঙ্কাল উদ্ধারের ঘটনার মামলায় গত ১৪ জুন আদালত তাদের বিরুদ্ধে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তারা ডেমরার সারুলিয়া ক্যানেলপাড় এলাকার শাহ আলমের বাগির ভাড়াটিয়া ছিলেন।
গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডেমরা ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ফরুক জানান, এক বছর আগে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানাধীন কাঁচপুর এলাকায় পতিতা থাকাকালে পাখির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হয়ে বিয়ে হয় রাজমিস্ত্রি আবু বক্কর সিদ্দিকের। তিনি পাখির খদ্দের ছিলেন। এ সময় প্রথম স্বামী মো. জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গেও বিয়ের সম্পর্ক ছিল পাখির। জাহাঙ্গীর নেশার টাকা যোগাড় করতে গিয়ে তার স্ত্রীকে দিয়ে দেহব্যবসা করাতেন।
সিদ্দিকের সঙ্গে বিয়ের পর সিদ্দিক ও পাখি ডেমরার সারুলিয়া টেংরা এলাকায় জনৈক নুর ইসলামের বাড়িতে ভাড়া চলে আসেন। এদিকে সিদ্দিকের সঙ্গে সংসার করাকালে ফেরত নেওয়ার জন্য পাখিকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন জাহাঙ্গীর। উত্ত্যক্তের মাত্র বেড়ে যাওয়ায় জাহাঙ্গীরকে তার বাসায় ডেকে এনে বুঝানোর চেষ্টা করেন ও পাখির পথ থেকে দূরে সরে যেতে বলেন সিদ্দিক। এতে জাহাঙ্গীর ক্ষান্ত হননি। পরবর্তীতে গত বছর নভেম্বর মাসের শুরুর দিকে পাখির সাবেক স্বামী জাহাঙ্গীরকে সারুলিয়ায় তার ভাড়া বাসায় এনে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে গুম করার উদ্দেশ্যে মশারি দিয়ে পেঁচিয়ে ড্রেনে ফেলে দেন সিদ্দিক। ওই লাশের কঙ্কালসার মৃতদেহ উদ্ধার করে গত ৩০ নভেম্বর বিকালে। আর এ বিষয়ে ডেমরা থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়।ওই খুনের ছয় মাস পর সিদ্দিক সারুলিয়া টেংরা এলাকার শাহ আলমের বাড়িতে চলে যান।
ডেমরা থানার ওসি মো. শফিকুর রহমান জানান, আলী হোসেন নামে পাখির আরেক খদ্দের ছিলেন। তিনি পাখির প্রতি দুর্বল ছিলেন। সিদ্দিকের সঙ্গে বিয়ের পরও আলী হোসেন পাখির সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক বজায় রাখতে উত্ত্যক্ত করতেন। এ ঘটনা পাখি তার বর্তমান স্বামী সিদ্দিককে খুলে বলেন। এ ঘটনাতেও সিদ্দিক আলী হোসেনকে পাখির পথ থেকে দূরে সরে যেতে বলেন। কিন্তু আলী হোসেন পাখির সঙ্গে সম্পর্ক বাদ দিতে রাজী না থাকায় গত ৪ মে পাখি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানাধীন কাঁচপুরে গিয়ে আলী হোসেনকে বুঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
এদিন আলী হোসেন পাখিকে বুঝিয়ে ডেমরার সারুলিয়ায় তার বাসায় এসে দৈহিক সম্পর্ক করেন। এরই মধ্যে সিদ্দিক বাসায় চলে আসলে আলী হোসেনকে দেখে তারা সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে আলী হোসেনকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেন সিদ্দিক। পরে পাখি তার পায়ের অংশে চেপে ধরলে সিদ্দিক বালিশ চাপা দিয়ে আলী হোসেনকে হত্যা করেন। এ সময় তারা বটি ও ছুরি দিয়ে লাশটিকে ১০-১২ টুকরা করে ডিএনডির অভ্যন্তরীণ খালে ফেলে দেয়।
এদিকে আলী হোসেনকে না পেয়ে তার পরিবারের লোকজন গত ৬ মে সোনারগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। আর এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করে পুলিশ গত ৫ জুন সিদ্দিক ও পাখিকে আটক করে। পরে আলী হোসেনের খুনের ঘটনায় তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পেয়ে সোনারগাঁও থানা পুলিশ হত্যা মামলা দায়ের করে ৬ জুন নারায়ণগঞ্জ আদালতে পাঠায়। ওই দিন আদালত তাদের জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ওসি শফিকুর রহমান আরও বলেন, কঙ্কালসার মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় ডেমরা থানা থেকে প্রথমে সন্দেহভাজন গ্রেফতার তিনজনের বিরুদ্ধে রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন আদালত। কঙ্কালের পা থেকে কোমর পর্যন্ত প্লাস্টিকের বস্তার ভিতরে ও কোমর থেকে মাথা পর্যন্ত মশারির কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় পড়েছিল। তবে কঙ্কালটি নারী না পুরুষ তা চিহ্নিত করা যায়নি এবং শরীর থেকে হাড়গুলো খুলে খুলে পড়ছিল। এ সময় সুরতহাল প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য কঙ্কালটি রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ।
কেএম/বাবু