মেইল প্রতিবেদক
রাত হলেই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে রাজধানীর সড়কগুলো। সেখানে বেপরোয়া ট্রাকের ধাক্কায় প্রায়ই বেগরে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। এসব ট্রাকের অধিকাংশই ফিটনেসবিহীন ও মেয়াদ উত্তীর্ণ। তাছাড়া চালকরাও নানা রকম নেশায় আসক্ত বলে জানা গেছে।
রাজধানী অধিকাংশ স্থানে রাত দশটার পর ট্রাফিক পুলিশ না থাকার সুবাদে রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হাজার হাজার ফিটনেসবিহীন মালবাহী ট্রাক ও যানবাহন। এসব যানবাহনের ধাক্কায় শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। দ্রুতগতির বেপরোয়া এসব যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে পথচারীদের পাশাপাশি মোটরসাইকেল আরোহী রয়েছে। সর্বশেষ গতকাল সোমবার ভোরে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার কাউয়ারটেক সিএমবি খালপাড় এলাকায় মোটরসাইকেল চালক আবুল খায়ের (৩০) ও আরোহী সাব্বির হোসেন (২৬) নামের দুই ব্যক্তিকে দ্রুতগতির একটি মালবাহী ট্রাক চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় নাঈম (১৭) নামে একজন গুরুতর আহত হয়েছে। ট্রাকের চাকা তাদের মাথার মাঝখান দিয়ে পিষে দেয়। সড়কে
তাদের মাথার ঘিলু ছড়িয়ে পড়ে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি। এর আগে গত ৯ এপ্রিল রোববার রাতে রাজধানীর পান্থপথে বেপরোয়া গতিতে চলা একটি ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মোটরসাইকেল আরোহী হাসনাইন জামান মেহরান (২৪) নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বরে পুরান ঢাকার ধোলাইখালে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই সহোদরের মৃত্যু হয়েছে। এভাবে প্রায়ই এসব বেপরোয়া যানবাহনের ধাক্কায় মানুষ আহত ও নিহত হচ্ছে। সারাদেশে সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
সোমবার ভোরের ঘটনার বিষয়ে গেন্ডারিয়া থানার ওসি মোঃ আবু সাঈদ আল মামুন বলেন, সোমবার কাঠ ব্যবসায়ী ও শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ঘাতক ট্রাকটিকে চিহ্নিত করা যায়নি। স্থানীয় একজন ব্যক্তির দেয়া একটা নাম্বারের উপর নির্ভর করে আমাদের পাঁচটি টিম একযোগে তদন্ত চালানো হচ্ছে। তবে গাড়িটির সিরিয়াল নম্বর নির্ণয় করা যায়নি। এ ঘটনায় সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ অনুযায়ী হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান।
গত সোমবার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গের সামনে নিহত আবুল খায়েরের স্বজন বাবুল বলেন, টগবগে তরুণ ব্যাবসায়ী। মাত্রই সংসারের হাল ধরেছে।গভীর রাতে কাজ করে বাসায় ফেরার সময় মোটরসাইকেল থেকে পেছনে থেকে ধাক্কা দিয়ে ঘাতক ট্রাক আমার ভাইকে পিষে মেরে ফেলেছে। আমাদের পরিবার এর বিচার চায়। এটা স্পষ্ট হত্যাকাণ্ড বলে জানান তিনি।
সূত্র বলছে, রাজধানীর আশেপাশে ইটা,বালু ও মাটির ব্যবসা কে কেন্দ্র করে কয়েক হাজার ফিটনেস বিহীন ট্রাক চলাচল করছে রাতের আঁধারে। অভিযোগ রয়েছে, নির্ধারিত মাসোহারার বিনিময়ে কতিপয় অসাধু শ্রমিক নেতা ও পুলিশের সহযোগিতায় বছরের পর বছর এসব যানবাহন বীরদর্পে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। অধিকাংশ সময় দুর্ঘটনা ঘটানো গাড়িকে সনাক্ত করা যায় না বলেও জানান অনেকে।
ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ- পুলিশ কমিশনার(ট্রাফিক) আসমা সিদ্দীকা মিলি রাতে ট্রাফিক পুলিশের ডিউটি শিথিলতা স্বীকার করে বলেন, আগে দশটার ভিতরে ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম শেষ হয়ে যেত। এখন সেটা এগারোটা, কখনো বারোটা পর্যন্ত ডিউটির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কমিশনার স্যারের দিক নির্দেশে পয়েন্টগুলোতে রাতে ডিউটির ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং তিন শিফট ডিউটি চালু করার বিষয়ে আলোচনা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে ।
চালকদের মাদকাসক্তের বিষয়ে তিনি বলেন, কোন চালক মাদকাসক্ত হয়ে থাকলেও আমাদের আইনগত ভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোন প্রক্রিয়া নেই । তাছাড়া ট্রাফিক পুলিশ সকল গাড়ি কিন্তু চেক করে না। তারপরও চেক করা কালীন মাদকাসক্ত হওয়ার প্রমাণ পেলে স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় বলে জানান তিনি ।
###
kk/rt/h