মেইল প্রতিবেদক
* স্থায়ী স্ট্যান্ড বানানোর প্রকল্প হিমাগারে
*রাতে ভয়াবহ যানজট ও চাঁদাবাজি
রাজধানীর জিরো পয়েন্ট থেকে বাবু বাজার ও সদরঘাট মুখী সড়ক জুড়ে বাস-ট্রাক স্ট্যান্ড ও ব্যাবসায়ী মালামাল লোড – আনলোড পয়েন্ট গড়ে তুলে চরম যানজট সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে রাজধানীতে প্রবেশে যানবাহন গুলোর কয়েক ঘন্টা সময় লেগে যাচ্ছে। কখনোও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক,কেরানীগঞ্জের কদমতলী ও পদ্মা সেতুগামী সড়ক পর্যন্ত যানজট পৌছে যাচ্ছে। ওই সড়কটিতে অন্তত ২০টি বাস ও লেগুনা স্ট্যান্ড রয়েছে। সিটি করপোরেশন বছরের পর বছর ফুলবাড়িয়া টার্মিনাল ইজারা দিলেও স্থায়ী টার্মিনাল নির্মান হিমাগারে চলে গেছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও পুলিশের নামে এসব স্ট্যান্ড থেকে মোটা অংকের চাঁদাবাজি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
নগরবিদরা বলছেন, জিপিও থেকে বাবুবাজার সড়ক এবং মেয়র হানিফ উড়ালসড়ক মুখের স্ট্যান্ড ও সড়কে ট্রাফিক সিষ্টেম ডেলে সাজানো ও পরিকল্পিত গণ পরিবহন ব্যাবস্থা গড়প তোলার উপর জোর দেন তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর জিপিও মোড় থেকে সমগ্র গুলিস্থান বাস্তু বাসস্ট্যান্ড ও হকারদের দখলে রয়েছে। তাছাড়া সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বরণী হয়ে নয়াবাজার পর্যন্ত সড়কের দু’পাশের মার্কেটগুলোর মালামাল লোড আনলোড পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কগুলোতে বাস-ট্রাক ও লেগুনা স্ট্যান্ড বানিয়ে রাখায় ওইসব স্থান দিয়ে পার হতে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় লেগে যাচ্ছে। ওই স্ট্যান্ডগুলোর মধ্যে গুলিস্তান, ভিক্টোরিয়া পার্ক, বাংলাবাজার, বাবুবাজার, রায় সাহেব বাজার, দোলাইখাল, চকবাজার, চাঁনখার পুল ও মিটফোর্ডে প্রধান সড়কের উপর বাস ও লেগুনা স্ট্যান্ড অন্যতম। ওইসব স্থান থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন গন্তব্যে কয়েক শত যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচল করছে। সড়কের উপর এলোপাথাড়ি গাড়ি রেখে যাত্রী উঠা-নামা করা হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ওইসব সড়কে চলাচলকারী মানুষ। এসব সড়কের মধ্যে গুলিস্তান অন্যতম। ফুলবাড়িয়া টার্মিনালে ১০ থেকে ১৫টি বাস রাখার মতো জায়গায় কয়েকটি বিআরটিসি বাস দাঁড়ানো। বাসে পাটুরিয়াগামী যাত্রী তোলা হচ্ছে।
বিআরটিসি স্ট্যান্ডের সামনে রাস্তার পূর্বপাশে সুন্দরবন মার্কেটের চারপাশে ইলিশসহ কয়েকটি পরিবহন কোম্পানি ও সদরঘাট-কদমতলীগামী লেগুনা স্ট্যান্ড বানানো হয়েছে। এছাড়া মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা থেকে বঙ্গবাজার পর্যন্ত ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা দিয়ে রাস্তার দুই পাশে অসংখ্য বাস পার্কিং করে রাখা হয়েছে। রাস্তাটি সরু ও দুই পাশে বাস রাখায় রিকশা চলাও দায় হয়ে পড়ছে। এছাড়া টিএন্ডটির রমনা ভবনের সামনের রাস্তা থেকে বায়তুল মোকাররম হয়ে জাতীয় স্টেডিয়াম পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশ স্ট্যান্ড বানিয়ে বাস দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। ফুলবাড়িয়ায় বনশ্রী পরিবহন, গাজীপুর পরিবহন, কালশী রুট ও চিড়িখানা রুটের গাড়ি ও রাস্তার পূর্বপাশে এন মল্লিক ও বান্দুরা পরিবহনের স্ট্যান্ড বানানো হয়েছে। গোলাপ শাহ মাজারের সামনে থেকে পুলিশ সদর দফতর ও নগর ভবনমুখী রাস্তাটির দুই পাশে অসংখ্য লেগুনা (হিউম্যান হলার) গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে উৎসব, বন্ধন, শীতল পরিবহন, জাতীয় স্টেডিয়ামের ১ ও ২নং গেটের সামনে রাস্তার দুই পাশে বোরাক, বোরাক এসি, দোয়েলসহ বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টার, বঙ্গবন্ধু স্কয়ার পাতাল মার্কেটের সামনে থেকে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে উঠার রাস্তা পর্যন্ত স্ট্যান্ড বানিয়ে রাস্তা দখল করে রাখা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দিয়ে চলাচলরত লাখ লাখ যাত্রী প্রতিদিন যানজটে পড়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বেশি বিপাকে পড়ছে রোগী ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। ফুলবাড়িয়া টার্মিনালটি বিআরটিসির মালিকানাধীন। ফুলবাড়িয়া এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের কোনো বাস টার্মিনালের জায়গা নেই। এজন্য গুলিস্তান ফুলবাড়িয়ার রাস্তাজুড়ে স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। এছাড়া ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় অবৈধভাবে স্ট্যান্ড গড়ে ওঠায় গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে। এতে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালগামী যাত্রী ও ঢাকা জজ আদালতে আসা বিচার প্রার্থীরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছে। মিটফোর্ড হাসপাতালের চারপাশে বাস ও লেগুনা স্ট্যান্ড গড়ে উঠায় রোগীরা বিপাকে পড়েছে। কখনোও রোগীবাহী এম্বুলেন্স হাসপাতালে প্রবেশে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অনেক সময় এম্বুলেন্সেই রোগী মারা যাচ্ছে।
এদিকে পুরান ঢাকায় রাতে তীব্রতা বেশি দেখা দিচ্ছে। গুলিস্তানের সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়ক, আরমানী টোলা, চাঁনখারপুল ও সোয়ারীঘাট বেড়িবাঁধের উপর রাতের গভীরতার সঙ্গ যানজটও বাড়তে থাকে। পণ্য পরিবহন ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ীরা সড়ক জুড়ে ট্র্যাক ও কয়ভার্ডি ভ্যানে মালামাল লোড-আনলোড করায় যানজটের তীব্রতা সৃষ্টি হচ্ছে।
ডিএসসিসির একাধিক সূত্র জানায়, ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ডিএসসিসির ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ হতে ২০১৬ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় বঙ্গবাজার হতে আনন্দবাজার পর্যন্ত এলাকার অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে ওই স্থানে আধুনিক সুবিধা সমৃদ্ধ বাস টার্মিনাল নির্মাণ করার প্রস্তাব করা হয়। তবে ওই এলাকায় মার্কেটধ রাজনীতির কারণে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন বিভাগের টানাটানিতে প্রকল্পটি বর্তমানে হিমাগারে চলে গেছে।
স্ট্যন্ড ঘিরে মাসে কোটি টাকা চাঁদাবাজি: পুরান ঢাকার ব্যাস্ততম সড়কগুলোতে বসানো স্ট্যান্ডকে ঘিরে মাসে কোটি টাকার চাঁদাবাজি চলছে। কতিপয় পরিবহন নেতা ও ট্রাফিক পুলিশকে গাড়ি প্রতি নির্ধারিত হারে চাঁদা প্রদান করতে হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পরিবহন মালিক২২ যুগান্তরকে বলেন, নির্ধারিত হারে চাঁদা না দিলেই গাড়িকে মামলা দেয়া হয়। এসব বিষয়ে একাধিকবার পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও কার্যকর কোন ফলাফল হয়নি বলে জানান তারা।
ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার ( ট্রাফিক) আসমা সিদ্দিকা মিলি বলেন, স্ট্যান্ডের জন্য সিটি কর্পোরেশন থেকে কোনো যায়গা বরাদ্দ না থাকায় সড়কের উপর গাড়ি রাখা হচ্ছে। এতে যানবাহনের শৃঙ্খলা রক্ষায় ট্রাফিক সদস্যদের বেগ পেতে হচ্ছে। তাছাড়া কোনো ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিবহন বিভাগের ব্যবস্থাপক হায়দার আলী জানান সিটি কর্পোরেশনের ইজারাকৃত সকল সিটি টোল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে তারপরও যারা কেউ কেউ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে