বাংলামেইল71 ডেস্ক : বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যদি কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অপেক্ষা করব না। সে যত উচ্চপদস্থ বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা হোক বা সুপ্রিম কোর্টের কর্মচারীই হোক।
সুপ্রিমকোর্ট অডেটরিয়ামে জাতীয় আইনগত দিবস উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ‘উচ্চ আদালতে সরকারি আইনগত সহায়তার অগ্রগতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্ট লিগাল এইড কমিটি এ সভার আয়োজন করে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, দুর্নীতি যে করবে তার বিরুদ্ধে প্রসিডিং শুরু করতে এক মুহূর্ত অপেক্ষা করব না। কিন্তু যদি কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না আসে তাহলে কিসের ভিত্তিতে আমরা ব্যবস্থা নেব। যখন কারো দুর্নীতি হাতেনাতে ধরা হয়, আমরা সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। এ সময় আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনে যদি দুর্নীতির সঙ্গে কেউ জড়িত হন, কোনো প্রমাণ থেকে থাকলে আমাদেরকে সঙ্গে সঙ্গে জানাবেন। আমরা ব্যবস্থা নিতে পিছপা হব না।
প্রধান বিচারপতির এক আত্মীয় হাইকোর্টে এসে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে প্রসঙ্গক্রমে বক্তব্যে আসে। ওই ব্যক্তি একটি রিট মামলার খরচ বাবদ আইনজীবীকে ১৮ লাখ টাকা দিয়েছেন। মামলার নকল তুলতে দুই আইনজীবীর সহকারীকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েও এখনো পাননি রায়ের অনুলিপি।
প্রধান বিচারপতি ওই প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ৭-৮ বছর আগে আমার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয় সার্ভিস ম্যাটারে রিট করার জন্য আমাকে বললেন। আমি তাকে অ্যাডভাইস করলাম। বললাম দেখো এই মামলা-মোকাদ্দমা করতে যেও না। এই মামলা করো না। এই মামলাতে তুমি হেরে যাবে। এটা সার্ভিস ম্যাটার। কারণ বিষয়টা হাইকোর্ট ডিভিশনের এখতিয়ারভুক্ত ছিল না। কিন্তু সে আমাকে না জানিয়ে হাইকোর্টে মোকদ্দমাটা করে। হাইকোর্ট তার পক্ষে রায়ও দেয়। রুল অ্যাবসলুট (যথাযথ ঘোষণা) হয়। অ্যাবসলুট হওয়ার পর সে আর নকল পায় না। অনেক দিন ঘুরে ঘুরে নকল যখন পায়নি এক পর্যায়ে আমার সঙ্গে দেখা করে। আমি তখন দেশের প্রধান বিচারপতি। এর আগে সে যে মামলা করেছে, রুল অ্যাবসলুট হয়েছে কিছুই আমাকে বলেনি। কারণ আমি তাকে মামলা করতে বারণ করেছিলাম।
প্রধান বিচারপতি বলেন, সম্প্রতি আমার ব্রাদারদের (সহকর্মী বিচারপতি) কাছে গল্পটা করেছিলাম।
প্রধান বিচারপতি বলেন, পরিস্থিতিটা আপনাদের বোঝানোর জন্য বলছি। আমি প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর একদিন সেই আত্মীয় আমার বাসায় আসেন। আমি কাজ করছিলাম। বাসায় এসে সেই আত্মীয় দেখি কান্নাকাটি শুরু করেছে। আমি বললাম কান্নাকাটি করো কেন। তখন সে বললো আপনি তো মোকাদ্দমা করতে নিষেধ করেছিলেন। আমি মোকাদ্দমা করেছিলাম। মোকাদ্দমাতে জিতেছিও। কিন্তু দুই বছর হলো। মামলার রায়ের কপি এখনো পাইনি। আমি যে অ্যাডভোকেট এনগেজ করেছিলাম সেই অ্যাডভোকেট সাহেবের ক্লার্ককে ৪০ হাজার টাকা দিয়েছি মামলার নকল ওঠানোর জন্য। কিন্তু সে রায়ের নকল দিতে পারেনি। পরে আরেকজন লইয়ারের ক্লার্ককে বললাম তুমি নকলটা তুলে দিতে পারো? সে বলল খুবই পারি। কিন্তু নকল তুলতে পারেনি। এর মধ্যে ওই ক্লার্ক ৮০ হাজার টাকা নিয়ে নিয়েছে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম তুমি এ কেসের জন্য আইনজীবীকে কত টাকা দিয়েছ? সে জানাল আমি আইনজীবীকে মোট ১৮ লাখ টাকা দিয়েছি। যে আইনজীবীর নাম বলল তার নাম আমি আগে শুনেনি, দেখিওনি। প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমি প্রধান বিচারপতি হিসেবে এই সমস্যাটা কিভাবে সমাধান করব? আপনারা বলেন তো দেখি। এটা সমস্যার একটা উদাহরণ দিলাম। এরপর প্রধান বিচারপতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেন।
সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি নাইমা হায়দারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম, অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক আব্দুন নূর দুলাল, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
সূত্র- যুগান্তর
বাংলামেইল71/কেএম/ঢাকা