সালে আহমেদ,ডেমরাঃ
প্রতিবছরের ন্যায় আবারও রাজধানীর ডেমরা ও আশপাশের এলাকায় বীরদর্পে ঈদ ও ইফতার পার্টির নামে বিভিন্ন সংগঠনের চাঁদাবাজি চলছে বলে অতিষ্ঠ মানুষ। এবারও রোজার মাস আসতেই শুরু হয়েছে নিয়ন্ত্রণহীন চাঁদাবাজি। এতে ক্ষুদ্ধ রয়েছেন এখানকার ব্যবসায়ী ও সুশিল সমাজ। এ বছরও চাঁদা দিতে তারা যেন জিম্মি হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় কাউন্সিলররাসহ নারী জনপ্রতিনিধি, সকল প্রকার ব্যবসায়ী, পরিবহন সেক্টর প্রধানরা, সকল শিল্পকারখানা ও নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বর্তমানে জিম্মি দশায় রয়েছেন।এদিকে প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের টেলিফোনে মুখ লজ্জায় তারা নাও করতে পারেছেন না। এ
বরকত-নেয়ামতের এ মাসে ডেমরা ও আশপাশের অঞ্চলে বিভিন্ন অসাধু ভুঁইফোড় রাজনৈতিক সংগঠন, বিভিন্ন ক্লাব, সামাজিক সংগঠন, বিভিন্ন সমিতি, ভূয়া মানবাধিকার সংস্থা ও নামে-বেনামে সংগঠন করে সময় ভেদে ইফতার পার্টির আয়োজন শুরু করেছে। আর ইফরাতের নামে চলছে রাজনীতি ও চাঁদাবাজি যা অন্তত কোন মুসলমান সংগঠনের করা উচিত নয়।অথচ ইফতার পার্টির নামে কার্ড ছাঁপিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ও কলকারখানার ব্যক্তির কাছে মোটা অংকের সালামি দাবি করে চাঁদাবাজির বিষয়টি এখন নিয়ন্ত্রণহীন ও ওপেন সিক্রেট।
এ বিষয়ে বামৈল এলাকার এক প্যাকেজিং ম্যানেজার আবু সালেহ খাঁন বলেন,এক গ্রæপের ৪ জন এসেছে বড় বড় ক্যামেরা নিয়ে গরিব দু:খিদের কাপড় দেওয়ার নাম ও ইফতার পার্টির নামে দুই কেটাগরিতে টাকা নিতে। বাধ্য হয়ে লোকলজ্জার ভয়ে টাকা দিলাম।কথিত আরেক অনলাইন টিভির সাংবাদিক কয়েকজন ক্যামেরা নিয়ে সোজা কারখানায় ঢুকে ভিডিও করা শুরু করেছে। তাদেরও লজ্জায় পড়ে টাকা দিয়ে বিদায় করতে হলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়,বিভিন্ন সংগঠনের নামে কতিপয় অসাধু মৌসুমি চাঁদাবাজরা রমজান মাস এলেই ডেমরা ও আশপাশের এলাকায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের বাধ্য করছেন চাঁদা দিতে। না দিলেই চলছে বিভিন্ন ঝামেলাসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন। অথচ সামাজিক মান-মর্যাদার ভয়ে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা চাঁদা দিয়ে দিলেও বাস্তবিক কিছু বলতে পারছেন না তারা।
ভুক্তভোগীদের আরও অভিযোগ, ডেমরায় বেশকিছু ভূয়া সংগঠন রয়েছে যারা প্রতিনিয়ত কোন উপলক্ষ্য আসলেই চাঁদা তোলা শুরু করেন। শীতকালিন বনভোজন, রমজান মাসের ইফতার পার্টি ও ঈদকে সামনে রাখাসহ সবকিছুতেই তাদের চাঁদাবাজি চলবে।
স্থানীয় জাকারিয়া ফ্যাশনের কর্নধার মো. সাইদুল মাদবর বলেন, রমজান আসলেই সাংবাদিক সংগঠন, মানবাধিকারসহ নানা কৌশলে কার্ড দিয়ে, অসহায়ত্ববোধের নাটক করে চাঁদা আদায় করে। বনভোজনে ও এমনি পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার টাকাও দাবি করে বছর ব্যাপি। এসব বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক হয় বলে বিষয়টি এমন যে গলার কাটা ফেলতে পারিনা আবার থাকলেও কষ্ট।
ভুক্তভোগীদের অভিমত, যারা সঠিক সামাজিক সংগঠনে জড়িত রয়েছেন আর যারা দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করেন তারা বছরে একবার ইফতার পার্টি করবে এ নিয়ে আমাদের কোন অভিযোগ নেই।কিন্তু ডেমরায় বেশ কিছু ভূয়া নামে বেনামে সংগঠন রয়েছে তাদের বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে আমরা ক্ষুব্ধ-অতিষ্ঠ।
দেখা গেছে, ডেমরায় ছোট-মাঝারি ও বড় মিলে সাড়ে সাড়ে ৪ শতাধিক সরকারি-বেসরকারী শিল্পকারখানাসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শপিংমল-মার্কেট রয়েছে। আর সংগঠনের নামে মৌসুমি চাঁদাবাজরা প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে রোজার শুরু থেকেই যাওয়া শুরু করেছে বলে তাদের অভিযোগ। বাহারি কার্ড ছাপিয়ে নানা কৌশলে প্রতিষ্ঠান ভেদে অংক বসিয়ে দিচ্ছে কর্তৃপক্ষের কাছে। মুখলজ্জায় পড়েও তাদের ইফতার পার্টির নামে চাঁদা দিতে হচ্ছে। কিন্তু এসব বিষয় মন থেকে মেনে নিতে পারছেননা ভুক্তভোগীরা।
এ বিষয়ে ওয়ারী বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহম্মেদ মোবাইল ফোনে বলেন, চাঁদাবাজি প্রতিরোধে ডেমরা জোন এলাকায় ইতিমধ্যেই বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ। ঈদ ও ঈফতার বিষয়টি দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়। কেউ সওয়াবের আশায় বিভিন্ন ইফতার পার্টিতে অর্থ সহযোগীতা করে। আবার অনেকের জন্য টাকা দেওয়া বাড়তি চাপ হতে পারে। তবে কোন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি যদি আমাদের কাছে চাঁদাবাজির বিষয়ে অভিযোগ করেন তাহলে তাদের নাম গোপন রেখে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।